Monday, April 3, 2017

সূচিপত্র (Gita-Secret : Contents)

<Next>

গীতা রহস্য



  (i)সম্পাদকের প্রাক্‌-কথন
 (ii)অনুবাদকের ভূমিকা

প্রথম ভাগ :  গীতারহস্য অথবা কর্মযোগশাস্ত্র


 1)বিষয়প্রবেশ (Introductory)
 2)কর্মজিজ্ঞাসা (Desire to know the Right Action)
 3)কর্মযোগশাস্ত্র (Science of Right Action)
 4)আধিভৌতিক সুখবাদ (Materialistic Theory of Happiness)
 5)সুখদুঃখবিবেক (Consideration of Happiness & Unhappiness)
 9)অধ্যাত্ম (Spirituality)
11)সন্ন্যাস ও কর্মযোগ (Renunciation and Karma-Yoga)
12)সিদ্ধাবস্থা ও ব্যবহার (State of a Perfect, and Worldly Affairs - incomplete)
13)ভক্তিমার্গ (Path of Devotion - incomplete)
14)গীতাধ্যায়সঙ্গতি (Continuity of the chapters of Gita)
15)উপসংহার (Summary - incomplete)

দ্বিতীয় ভাগ : পরিশিষ্ট (Appendix)

 1.1)গীতা ও মহাভারত (Gita & Mahabharat)
 1.2)গীতা ও উপনিষৎ (Gita & Upanishads)
 1.4)ভাগবত ধর্মের উদয় ও গীতা (Advent of Bhagavata Dharma & Gita)
 1.6)গীতা ও বৌদ্ধগ্রন্থ (Gita & Buddhist Literature)

(i) সম্পাদকের প্রাক্‌-কথন


বিশ্বমনীষার শ্রেষ্ঠ সম্পদ শ্রীমদ্‌ভগবদ্গীতা ভারতীয় শাশ্বত সংস্কৃতির নির্যাস । জগতের সারস্বত সমাজে ভারতের শ্রেষ্ঠ দান এই সদ্‌গ্রন্থ । বহুদিন পূর্বে প্রতীচ্যভূখন্ডে ইংরেজ মনীষী কার্লাইল মার্কিণ মনীষী এমারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে গীতা উপহারের মাধ্যমে সৌহৃদ্যকে সুদৃঢ় করেছেন । বিশ্বের সমুন্নত ষট্‌ত্রিংশৎটি ভাষায় এই গ্রন্থের প্রায় তিনি সহস্র সংস্করণ হয়েছে । বিশ্বের ইতিহাসে যথার্থ গণসাহিত্য এই গীতা । পণ্ডিত-মূর্খ, ধনী-দরিদ্র, স্ত্রী-পুরুষ, শিক্ষক-সৈনিক, কর্মী-ব্যবসায়ী, ছাত্ৰ-শ্রমিক, ত্যাগী-ভোগী সকলের কাছেই এই গ্রন্থের আবেদন । নির্জন গুহাবাসী নিষ্কিঞ্চন তপস্বী হতে রাজপ্রাসাদবাসী ধনী, সর্বকর্মত্যাগী সাধু হতে সদা কর্মনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা পর্যন্ত সকলেই জীবনের পাথেয় এই গীতা হতে পেয়ে থাকেন । গীতা মানব-সমাজে জ্ঞান-কল্পতরু । তাই যুগে যুগে গীতার উপর রচিত হয়েছে অসংখ্য ভাষ্য । মনীষী দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাকে বলেছেন ভারতের কুটীরে বিনা তৈলের প্রদীপ । মহাত্মা গান্ধীর মতে গীতা হচ্ছে শান্তি ও শক্তিপ্রদায়িনী মাতা । অধ্যাত্ম জগতে গীতার সাধনা সুবিদিত । কিন্তু, দেশের রাষ্ট্ৰীয় মুক্তি সংগ্রামের এবং আন্তর্জাতিক মৈত্রীসাধনায়ও গীতার অনন্যসাধারণ ভূমিকা অবিস্মরণীয় । গীতা নিষ্কাম কর্মযোগ, আত্মসমর্পণ যোগ, আত্মতত্ত্ব এবং স্থিতপ্ৰজ্ঞত্বের আদর্শের দ্বারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তি-যোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল । ভারতের প্রায় সকল স্বাধীনতা সংগ্রামে অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ ছিল এই গীতা । আবার অহিংস সংগ্ৰামীরাও গীতার বাণীতেই পেয়েছেন আদর্শের প্রেরণা । সহিংস এবং অহিংস ভারতে মুক্তিসংগ্রামের উভয় পথের পথিকদের পথের পার্থক্য থাকলেও লক্ষ্য ছিল এক পূর্ণ স্বাধীনতা, মন্ত্র ছিল এক “বন্দে মাতরম্‌", তেমনি পাথেয়ও ছিল এক - আর তা হ’ল শ্ৰীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা ! তাই বিপ্লবী যোগী ঋষি অরবিন্দ, চরমপন্থী নেতা লোকমান্য তিলক, আবার অহিংস সংগ্রামী মহাত্মা গান্ধী ভূদান আন্দোলনের প্রবর্তক নিরীহ বিনোবাভাবে গীতাপ্রবচনে সমুৎসুক, রচনাও করেছেন স্ব স্ব আদর্শের আলোকে গীতার বিশাল ভাষ্য । আবাল্য এঁরা গীতাধ্যায়ী । মহাসংগ্রামী নেতাজী সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস নেতা হিসেবে কারাগার হতে সহকর্মী তরুণদের নিত্য গীতাপাঠের প্রবর্তনা দিচ্ছেন । আবার আজাদ হিন্দ ফৌজের মহানায়ক রূপে রণক্ষেত্রের বোমাবর্ষণের মধ্যেও বুকপকেটে রেখেছেন ছোট্ট গীতা, আলেখ্যধৃতা মাতা কালিকা এবং তুলসীমালিকা । ক্ষুদিরাম-কানাইলাল-বিনয়-বাদল-দিনেশ-প্রফুল্ল প্রভৃতি দধীচির ঘরে, দলে এবং জেলে গীতা ছিল নিত্যপাঠ্য । অবেস্তা, বাইবেল, কোরাণ, ত্রিপিটক এই রকম প্রত্যক্ষভাবে কোন দেশের রাষ্ট্ৰীয় মুক্তিসংগ্রামে । মরণপণ সৈনিকদের প্রবুদ্ধ করেছিল কিনা জানা নেই । তাই বলি গীতা শুধু ধৰ্মগ্রন্থ নয়, ধর্মাৰ্থকামমোক্ষ চতুর্বর্গের তথা সামগ্রিক জীবনপথের সময়সারণী তথা টাইমটেব্‌ল্‌; জীবনের সকল পথের যাত্রীরই অপরিহার্য গ্রন্থ । শুধু ব্যক্তির বা রাষ্ট্রবিশেষের নয়, সমগ্ৰ বিশ্বের সংকট নিরসনেও গীতা অপরিহার্য গ্রন্থ । বিশ্বশান্তি এবং বিশ্বকল্যাণের প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্ৰসংঘ বা U.N.O এর প্রতিষ্ঠা । তারও পন্থা নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের প্রাক্তন সেক্রেটারী জেনারেল স্বর্গত দ্যাগ্‌ হ্যামারশিলড্‌ বলছেন – “ফলাকাংক্ষা করে কর্ম করা অপেক্ষা ফলাশা ত্যাগ করে কর্ম করা অনেক ভাল । এই উপদেশ সকল যুগের সকল দর্শনের চুড়ান্ত কথা । রাষ্ট্রসংঘের সকল প্রচেষ্টায় আমরা যদি গীতার এই উপদেশ অনুসরণ করে চলতে পারি, তবেই আমরা সুখী হব” । - "The Bhagavad Gita echoes an experience of all ages and all Philosophies when it says - work with anxiety about results is far inferior to work without such anxiety, in calm self-surrender. These words expressed deep faith and we will be happy if we can make that faith ours in all our efforts." জার্মেণিতে আণবিক বিজ্ঞানী ওপেনহাইমার গীতার শ্লোক পাঠ করে লব্ধ আণবিক গবেষণার ফল ঘোষণা করেন । নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক অলডাস্‌ হ্যাক্‌সলী গীতার অনুবাদ করেন, স্বদেশেও গণিতজ্ঞ নারলিকার কন্ঠস্থ করেন গীতা । প্রতিটি মানুষই জীবনসংগ্রামে রণক্লান্ত সৈনিক, অর্জুনের ন্যায় বিষাদগ্ৰস্ত । বিষাদ হতে মুক্তি সবারই কাম্য । অর্জুনকে উপলক্ষ্য ক’রে শাশ্বতকালের নিখিল মানবের বিষাদ হতে মুক্তি তথা মোক্ষের যোগমার্গ ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ গীতায় প্রদর্শন করেছেন ।

এহেন গ্রন্থের বিবিধ ভাষায় বহুবিধ ভাষ্যের মধ্যে লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলকের “গীতারহস্য” বা কর্মযোগশাস্ত্র স্বকীয় মহিমায় প্রোজ্জ্বল । মূল গ্রন্থ মারাঠী ভাষায় রচিত হলেও রবীন্দ্রনাথের দাদা মনীষী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বঙ্গানুবাদ করেন বহুদিন পূর্বে । গ্রন্থটি বৰ্তমানে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছিল বলে বহতা নদীর ন্যায় বহতা সাধনার ধারাধারক, শ্ৰীসুদর্শন-সম্পাদক, পরম পূজ্যপাদ মনীষী, শ্ৰীমদ্‌ ব্ৰহ্মচারী শিশির কুমার গ্রন্থটি পুনঃ প্রকাশের জন্য কল্যাণীর সন্ত আশ্রমে দুচারবার অধমকে বলেন । আমার প্রতি অতি প্রীতিমান্‌, সংস্কৃতিমুর্তি, নিষ্কাম জননেতা, মনীষী স্বর্গত সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরও আমায় এ নিয়ে তাগাদা দিয়েছিলেন । বিশিষ্ট বিজ্ঞানাচার্য ডঃ প্রিয়দারঞ্জন রায়েরও অনুরাগ স্মরণ করি । সাত বৎসর বয়স থেকে নিত্য গীতাপাঠে প্রবত্ত হই কী এক দুর্নিবার আকর্ষণে । বাল্যকাল হতেই গীতাপাঠে অভ্যস্ত থাকায় যৌবনের চৌমাথায় এসে গীতাসংক্রান্ত নানাগ্রন্থ এবং ভাষ্যপাঠে কৌতুহলী হই । সমসাময়িক কালে পূজনীয় ডঃ মহানামব্রত ব্ৰহ্মচারীজী, স্বামী জগদীশ্বরানন্দ, মহাত্মা রামদয়াল মজুমদার, জগদীশচন্দ্র ঘোষ এবং আরো বহু মনীষীর গীতা-আলোচনা পাঠে উদ্দীপ্ত হই । আলোকিত হই মদীর গুরুদেব শ্ৰীমৎ সীতারামদাস ওঙ্কারনাথদেবের দিব্য সাধনালব্ধ গীতার “প্রণব পীযুয” ভাষ্যে । বৎসরকাল পূর্বে লোকমান্য তিলকের পৌত্ৰ কেশরীর বর্তমান সম্পাদক, প্রাক্তন সংসদ সদস্য শ্ৰীযুক্ত জে. এস. তিলক লণ্ডন হতে প্রকাশিত তিলক মহারাজের সুবিস্তৃত প্রামাণ্য জীবনী স্বতঃ প্রবৃত্ত হয়ে আমাকে উপহার দিয়ে কৃতাৰ্থ করেন । তখন হতেই বঙ্গভাষী জনগণের কাছে ঐ মহাত্মার জীবনী এবং তাঁর শ্রেষ্ঠ কৃতি গীতারহস্য তুলে ধরার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করতে থাকি । অসংখ্য কর্মের তাড়নায় এবং গীতারহস্যের মূল গ্রন্থের অভাবে সংকল্প সত্য হয়ে উঠ্‌ছেনা দেখে বিষন্ন হয়ে পড়ি । এমন সময়ে আমার একান্ত প্রীতিভাজন সারস্বতকল্প গ্রন্থপ্রকাশক পুরুষোত্তম শ্ৰীশ্ৰীঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের আশ্রিত ভক্ত শ্ৰীনিতাই চন্দ্ৰ ভক্ত একটি দুর্লভ গ্রন্থ তাঁকে প্রকাশের জন্য দিতে অনুরোধ করেন । ফলে লোকমান্যের আকর্ষণীয় জীবনী এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পরিচয় সহ গীতাভাষ্য সম্পাদনায় প্রবৃত্ত হই ।
____________________________________
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ গীতারহস্যের উপক্রমণিকার কিয়দংশ অনুবাদ করে মাসিক পত্রে প্রকাশ করেন । সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে গ্রন্থখানি অনুবাদ করতে অনুরোধ করেন এবং লোকমান্য তিলককে অনুবাদ প্রকাশের অনুমতি প্রার্থনা করে পত্র দেন । ভারতবর্ষে এই গ্রন্থের বহুল প্রচারের জন্য তিলক স্বয়ং প্রভূত অর্থ ব্যয়ে হিন্দী, গুজরাটী, তামিল, তেলেগু ও কর্ণাটি সংস্করণ প্রকাশ করেন । তাঁর ইচ্ছা ছিল যে উপযুক্ত ব্যক্তি দ্বারা বঙ্গভাষাতেও এর অনুবাদ প্রকাশ করাবেন । তাই তিনি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে লিখলেন –

বোম্বাই
২০শে অক্টবর ১৯১৭
মহাশয়,

ইহার বহুপূর্বে আপনার পত্রের উত্তর দিতে পারি নাই, তজ্জন্য আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি । উহার কারণ এই যে, আমি গত দেড় মাস এখানে ওখানে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলাম এবং আপনার পত্রের উত্তর দিতে সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হইয়াছিলাম । এ ওজর কিছুই নহে তাহা জানি, কিন্তু ইহাই যথাৰ্থ কারণ ।

বাঙ্গালা ভাষায় আমার গীতা সম্বন্ধীয় গ্রন্থের অনুবাদ করাইবার নিমিত্ত আমি ব্যগ্র । কিন্তু বাঙ্গালা ও মহারাষ্ট্ৰীয় উভয়বিধ ভাষাতে ব্যুৎপত্তি আছে এতাবৎকাল এরূপ কোনও পণ্ডিতের সন্ধান পাই নাই । গত এপ্রিল মাসে কলিকাতায় গিয়াছিলাম এবং তখন শুনিয়াছিলাম যে আপনার এক ভ্রাতা গীতারহস্যের উপক্ৰমণিকার একটি বঙ্গানুবাদ মাসিক পত্রে প্রকাশ করিয়াছেন । কিন্তু আমি তখন শুনিয়াছিলাম যে তিনি সমগ্ৰ গ্ৰন্থখানি অনুবাদ করিবেন কিনা তাহার স্থিরতা নাই ৷ সুতরাং আমি আর ঐ বিষয়ে কোনো অনুসন্ধান করি নাই; আমি মনে করিতেছিলাম আর কাহাকেও এই কার্যের ভার প্রদান করিব । এখন দেখিতেছি, আপনি এ বিষয়ে মনোযোগ দিতেছেন । এখন আমার আর কোনও ভাবনা নাই, এবং অনুবাদ যে ঠিক মূলানুযায়ী হইবে তৎসম্বন্ধে আমি নিশ্চিত ।

আমি যে অনুবাদককে তিন হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিব এ সংবাদ সত্য নহে । তবে প্রয়োজন হইলে অনুবাদের জন্য দুই হাজার টাকা ব্যয় করিতে এবং অনুবাদের স্বত্ব ক্রয় করিয়া নিজ ব্যয়ে প্রকাশ করিতে আমি প্রস্তুত আছি । হিন্দী ও গুজরাটী সংস্করণ যাহা প্রকাশিত হইয়াছে তাহার সম্বন্ধেও আমি ইহাই করিয়াছি, এবং অধুনা যন্ত্ৰস্থ তামিল, তেলেগু, ও কর্ণাটী সংস্করণের জন্যও ঐরূপ ব্যবস্থা করিতেছি ।

আমার অভিপ্রায় এই যে অনুবাদটি মূল মহারাষ্ট্ৰীয়ের ন্যায় বিষয়ের প্রকৃতির সহিত সামঞ্জস্য রাখিয়া যতদূর সম্ভব সরল ভাষায় লিখিত হয় । আমি যতদূর সম্ভব সরল ভাষায় বিষয়টির আলোচনা করিতে চেষ্টা করিয়াছি, যাহাতে আমাদের মেয়েরাও অনায়াসে সরল কথা বুঝিতে পারেন । অনুবাদটিও এইরূপ হওয়া অবশ্যক ।

দ্বিতীয়তঃ, আমার ইচ্ছা অনুবাদের ছাপাই বাঁধাই ঠিক মূলের অনুরূপ হয়, এবং উহার মূল্য তিন টাকা মাত্র ধার্য হয় ।

এই সকল শর্তে কার্য করিলে আমি অনুবাদ হইতে কিছই লাভ করিতে চাই না । বরঞ্চ অনুবাদককে সমস্ত ছাড়িয়া দিতে প্রস্তুত । যদি তিনি অনুবাদ নিজ ব্যয়ে প্রকাশ না করেন, আমি অনুবাদককে, উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান করিয়া নিজে অনুবাদ প্রকাশের সমস্ত ভার বহন করিতে প্রস্তুত আছি । এ পর্যন্ত যতগুলি অনুবাদ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে এই শেষোক্ত ব্যবস্থাই করা হইয়াছে ।

এ বিষয়ে সমস্ত কথাবার্তা স্থির করিবার পূর্বে উপরি লিখিত প্রস্তাবগুলির সম্বন্ধে আপনার অভিমত জানিতে ইচ্ছা করি । আগামী সপ্তাহে আমি পুণায় যাইব । পত্রাদি পুণার ঠিকানায় (কেশরী অফিস, পুণা সিটি) পাঠাইবেন ।

পত্রোত্তর প্রদানের বিলম্বের জন্য পুনরায় ক্ষমা প্ৰার্থনা করি ।
ভবদীয়
বালগঙ্গাধর তিলক

বালগঙ্গাধর তিলকের আর একটি পত্র
পুণা
২০শে ডিসেম্বর ১৯১৭
মহাশয়,

আগামী কংগ্রেসের জন্য আগামী ২৬শে হইতে ৩০শে পর্যন্ত কলিকাতায় থাকিব । তখন আপনার কোনও প্রতিনিধির সহিত গীতারহস্যের বঙ্গানুবাদ সম্বন্ধে কথাবার্তা হইতে পারে । দাক্ষিণাত্যের প্রতিনিধিবর্গের জন্য নির্দিষ্ট বাসস্থানে আমি অবস্থান করিব । কংগ্রেস অনুসন্ধান কার্যালয়ে কিংবা অমৃতবাজার পত্রিকা কার্যালয়ে অনুসন্ধান করিলে আমার ঠিকানা অবগত হুইতে পারবেন । আপনার কোনও প্রতিনিধি বা বন্ধুকে আমার সহিত কলিকাতায় সাক্ষাৎ করিতে বলিয়া বাধিত করিবেন ।
ভবদীয়
বালগঙ্গাধর তিলক

(মন্মথনাথ ঘোষ লিখিত ‘জ্যোতিরিন্দ্রনাথ’ নামক গ্রন্থ থেকে পত্রগুলি সংকলিত ।)

এই গ্রন্থ তিলক ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উভয়েরই প্রতিভার উজ্জ্বল নিদর্শন । শক্তিশালী লেখকের দ্বারা ভাষান্তরেও যে মূলের বক্তব্য সরল ও আকর্ষণীয় করা যায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তা দেখিয়ে গেলেন । বিশ্বের অনুবাদ সাহিত্যে এ এক দুর্লভ সংযোজন । বঙ্গ এবং মহারাষ্ট্রের চৈতন্যশক্তির সংযোজক এই সদ্‌গ্রন্থ ।
____________________________________

আদর্শ শিক্ষাবিদ্‌ শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ দত্ত মূল গ্রন্থটি দিয়ে এবং ব্রহ্মনিষ্ঠ গৃহী শ্ৰীযুক্ত শচীন্দ্রনাথ ঘোষ নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে আমায় সচেতন রেখেছেন ৷ "জিজ্ঞাসা” হতে প্রকাশিত শ্রদ্ধেয় সারস্বতাগ্রজ ডঃ সুশীল রায় রচিত গবেষণাগ্রন্থ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ওপর আলোকপাতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে । রবীন্দ্রভারতী প্রদর্শশালার অধ্যক্ষ, শিল্পী, সুহৃদ্‌ শ্ৰীযুক্ত সমর ভৌমিক-এর আনুকুল্যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পরিণত জীবনের আলেখ্যটি পেয়েছি । সংস্কৃত ও ভারতীয় সংস্কৃতির বর্তমান সংকটলগ্নে নিরন্তর সংগ্রাম, পরিজনবর্গের দীর্ঘ অসুস্থতা, এবং নানা প্রতিকূলতায় বিব্রত থাকার মধ্যেও শ্ৰীভগবানের অপার করুণায় এই দুর্লভ গ্রন্থ প্রকাশিত হল । পূর্বতন ভাষ্যের সঙ্গে কোথাও কোথাও বৰ্তমান সম্পাদকের ব্যাখ্যা সংযোজিত হয়েছে । তিলক ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনীও সংক্ষেপে আলোচনা করেছি । পূজনীয় পিতৃদেব, ঋষিকল্প মনীষী, কবিশেখর শ্ৰীযুক্ত বিশ্বেশ্বর বিদ্যাভূষণ কাব্যতীৰ্থ এবং করুণাময়ী মাতৃদেবী শ্ৰীযুক্ত মহামায়া দেবীর নিরন্তর উৎসাহ স্মরণীয় । সহধর্মিণী শ্ৰীমতী উষাদেবী চক্ৰবর্তী এম-এ, বি, টি রোগশয্যা হতে এবং পুত্র শ্ৰীমান্য নির্মাল্য নারায়ণ এই সম্পাদনায় নানাভাবে সাহায্য করেছে ।

সর্বোপরি গুরুদেব শ্ৰীভগবন্মূর্তি অনন্ত শ্ৰীবিভূষিত সীতারাম দাস ওঙ্কারনাথ দেবের অকৃপণ আশিষ্‌ নেপথ্যে নিয়তই অনুভব করে ধন্য । এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের সম্পাদনা অত্যন্ত দুরুহ কার্য । তদুপরি বর্তমানে অভূতপূর্ব বন্যা এবং কাগজের দুষ্প্রাপ্যতায় পদে পদে প্রকাশকর্ম ব্যাহত হয়েছে । ভুলত্রুটির জন্য সহৃদয় পাঠকের নিকটে পূর্বেই মার্জনা প্ৰার্থনা করি । সংস্কৃত বিশুদ্ধ বানান রাখার চেষ্টা করেছি । সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভগবান পার্থসারথির উদ্দেশ্যেই বলি - ওঁ শ্ৰীকৃষ্ণার্পণমস্তু । ইতি -
বিনীত – 
শ্ৰীধ্যানেশ নারায়ণ চক্রবর্তী
অধ্যাপক - রবীন্দ্ৰ ভারতী বিশ্বববিদ্যালয়, কলিকাতা-৫০
শুভ মহালয়া — ১৩৮৫ বঙ্গাব্দ (1978)
ঋষিধাম, পোঃ-দত্তপুকুর
জিলা-২৪ পরগণা 

(ii) অনুবাদকের ভূমিকা


লোকমান্য মহাত্মা তিলক তাঁহার প্রণীত “গীতারহস্য” বঙ্গভাষায় অনুবাদ করিবার ভার আমার প্রতি অৰ্পণ করিয়া আমাকে গৌরবান্বিত করিয়াছেন । তাঁহার অনুরোধক্রমে, বঙ্গবাসীর কল্যাণ-কামনায়, বঙ্গসাহিত্যের উন্নতিকল্পে, - অতীব দুরূহ ও শ্রমসাধ্য হইলেও - আমি এই গুরুভার স্বেচ্ছাপূর্বক গ্ৰহণ করিয়াছিলাম । আমি অনুবাদ শেষ করিয়া উহা তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ক্ৰমশঃ প্ৰকাশ করিতেছিলাম । ভগবানের কৃপায়, এতদিনের পর উহা গ্ৰন্থাকারে প্ৰকাশ করিয়া, আমার এই কঠিন ব্ৰত উদযাপন করিতে সমর্থ হইয়াছি । কেবল একটা আক্ষেপ রহিয়া গেল - এই অনুবাদ গ্ৰন্থখানি মহাত্মা তিলকের করকমলে স্বহস্তে সমর্পণ করিতে পারিলাম না । তাহার পূর্বেই তিনি ভারতবাসীকে শোকসাগরে ভাসাইয়া দিব্য ধামে চলিয়া গেলেন ।

ভগবদগীতার মাহাত্ম্য কীর্তন করা বাহুল্য । এমন উদার ধর্মগ্রন্থ পৃথিবীতে আর একখানিও নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না। ইহা এত উদার যে, সকল ধর্মসম্প্রদায়ই এই অমূল্য গ্ৰন্থখানিকে আপনার করিয়া লইয়াছে । কতটা উদার, নিম্নলিখিত শ্লোকেই তাহার পরিচয় পাওয়া যায় :-
“যে যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্ৰদ্ধয়ার্চ্চিতুমিচ্ছতি ৷ 
তস্য তস্যাচলাং শ্ৰদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম্ ৷৷”
অর্থাৎ - “যে কোন ভক্ত শ্ৰদ্ধাসহকারে যে কোন দেবতার অর্চনা করিতে ইচ্ছা করে, আমি তাহাকে সেই অচলা শ্ৰদ্ধা বিধান করি ।”

এমন গ্রন্থের ভাষ্যকার হওয়াও গৌরবের বিষয় । এইরূপ গ্রন্থের যে বহুতর ভাষ্য হইবে তাহাতে আশ্চৰ্য নাই । কিন্তু এ কথা বলিলে বোধ হয় অত্যুক্তি হইবে না যে, কালিদাসের ভাষ্যকার যেরূপ মল্লিনাথ, মহাত্মা তিলকও সেইরূপ শ্ৰীমদ্ভগবদগীতার অপ্ৰতিদ্বন্দ্বী ভাষ্যকার । ভাষ্যকারদিগের মধ্যে কেহ বা জ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়াছেন, কেহ বা ভক্তিতে প্ৰাধান্য দিয়াছেন, কেহ বা সন্ন্যাসকে প্রাধান্য দিয়াছেন । ভগবদগীতা এই সমস্তের সমন্বয় বলিলে অত্যুক্তি হয় না । কিন্তু এই সমন্বয় সাধনের মুখ্য তাৎপৰ্যটা কি, তাহারই তিলক তাঁহার গীতারহস্যে আভাস দিয়াছেন । তাঁহার মতে, কর্মই গীতার মধ্য-বিন্দু - মুখ্য উদ্দেশ্য । ভগবান অর্জুনকে সর্বতোভাবে বুঝাইয়াছেন যে, জ্ঞান ও ভক্তি, কর্মের পরিপন্থী নহে, পরন্তু কর্মের পরিপোষক ও সহায়; জ্ঞান ও ভক্তি কর্মে গিয়া পরিসমাপ্ত হয় ও পরিণতি লাভ করে । এইভাবেই গীতাকার জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ ও কর্মযোগের সমন্বয় করিয়াছেন । কর্মই যে গীতার প্রধান কথা তাহাতে সন্দেহ নাই, - কেননা, অর্জুনকে যুদ্ধকাৰ্যে প্ৰবৃত্ত করাই শ্ৰীকৃষ্ণের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল । শুধু “কর্ম করিবে” বলিলে ঠিক সমন্বয় হইত না; ভগবান বলিয়াছেন, যাহা স্বধর্ম-অনুমোদিত সেই কাজই অবশ্য কর্তব্য এবং ঈশ্বরের হস্তে কর্মের ফলাফল সমৰ্পণ করিয়া, নিষ্কামভাবে যে কর্ম করা হয়, সেই কর্মই শ্ৰেয় । এইরূপ কথা বলাতেই জ্ঞান, ভক্তি ও কর্মের সমন্বয় সম্যক রূপে সাধিত হইয়াছে । জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগের মাহাত্ম্য পৃথকভাবে কীর্তিত হইলেও, জ্ঞান ভক্তিসমন্বিত কর্মযোগের প্রাধান্যই যে “গূঢ়ভাবে গীতাতে সূচিত হইয়াছে, ইহাই মহাত্মা তিলক গীতার সমস্ত উক্তি হইতে দেখাইয়াছেন এবং এই মতের পোষকতায় সমস্ত শাস্ত্ৰসিন্ধু মন্থন করিয়াছেন, এমন কি এই উদ্দেশ্যে বিদেশী শাস্ত্রকেও বাদ দেন নাই । হিন্দুশাস্ত্রের এত কথা আনুসঙ্গিকক্রমে তাঁহার গ্রন্থের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছে যে, একজন যদি মনোযোগসহকারে এই গ্ৰন্থ পাঠ করে, তাহার বেশ একটু শাস্ত্ৰজ্ঞান জন্মে এবং সে হিন্দুধর্মের প্রকৃত মর্মগ্রহণ করিতে পারে । এই গ্রন্থ রচনায় মহাত্মা তিলকের অসাধারণ পাণ্ডিত্য, অধ্যবসায় ও কর্মশক্তি দেখিয়া বিস্ময়াস্তম্ভিত না হইয়া থাকা যায় না । আরও আশ্চর্যের বিষয় এই, তিনি কারাগারে থাকিয়া যখন এই গ্ৰন্থ লিখিয়াছিলেন তখন তাঁহার হাতের কাছে স্মৃতিসাহায্যকারী কোন গ্ৰন্থই ছিল না - তিনি ইহার সমস্ত উপকরণই স্বকীয় পূর্বসঞ্চিত স্মৃতিভাণ্ডার হইতে গ্ৰহণ করিয়া রচনাকাৰ্য সমাধা করিয়াছিলেন । ধন্য তাঁহার স্মৃতিশক্তি ! ধন্য তাঁহার প্রতিভা !

এই অনুবাদগ্ৰন্থ মুদ্রিত হইতে বিলম্ব হওয়ায়, আমরা জানি, অনেকের ধৈর্য্যচ্যুতি হইয়াছিল । নানা অনিবাৰ্য কারণে বিলম্ব হুইয়া গিয়াছে, তজ্জন্য তাহাদের নিকট বিনীতভাবে ক্ষমা ভিক্ষা করিতেছি ।

আর একটা কথা এখানে বলা আবশ্যক । আমার স্নেহভাজন, ভ্রাতুষ্পপুত্র তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক শ্ৰীমান ক্ষিতীন্দ্ৰনাথের সাহায্য না পাইলে - তিনি “গীতারহস্যের” পরিশিষ্টাংশ টীকাসমেত মূল ভগবদগীতার অনুবাদ না করিয়া দিলে এবং যত্নসহকারে সমস্ত মুদ্রাঙ্কনকাৰ্যের তত্ত্বাবধান না করিলে, এই অনুবাদ-গ্ৰন্থ প্ৰকাশ করা অসম্ভব হইত । এইজন্য শ্ৰীমানকে অন্তরের সহিত আশীর্বাদ করিতেছি । গ্রন্থের প্রুফ সংশোধনে আদিব্ৰাহ্মসমাজের পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত সুরেশচন্দ্র সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিশেষ সাহায্য করিয়াছেন । এই অবসরে তাঁহার নিকট কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করিতেছি ।

পরিশেষে বক্তব্য, “গীতারহস্যের” এই বঙ্গানুবাদ পাঠ করিয়া, এই রাষ্ট্রনৈতিক চাঞ্চল্যের দিনে, যদি কাহারও স্থিরপ্রজ্ঞা লাভ হয়, যদি কাহারও অন্তরে অচলা ধর্মবুদ্ধি নিষ্কাম কর্তব্যবুদ্ধি জাগৃত হয় তাহা হইলে আমাদের শ্রম সার্থক হইবে ।


শ্ৰীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
৭ই পৌষ, ১৩৩০ (1923)
রাঁচি, শান্তিধাম
___________________________
Hard Copy Source:

লোকমান্য বাল-গঙ্গাধর তিলকের "শ্রীমদ্ভগবদ্গীতারহস্য" অথবা "কর্ম্মযোগশাস্ত্র", ১৯২৪: অনুবাদক শ্রী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ_ঠাকুর; প্রকাশক : শ্রীক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুর; মুদ্রক : শ্রীরণগোপাল চক্রবর্ত্তী, আদিব্রাহ্মসমাজ, ৫৫ আপার চিৎপুর রোড, কলিকাতা । ২০১৩ দশম প্রকাশ, সম্পাদক : ডাঃ ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তী, প্রকাশক : প্রগ্রেসিভ বুক ফোরাম, শ্রীনিতাইচন্দ্র ভক্ত, ৩৩, কলেজ রো, কলকাতা-৭০০০০৯ ।

Reference:

"Shrimadbhagabadgita Rahasya" or "Karmajogsastra" by Lokmanya Bal Gangadhar Tilak, translated by Sri Jyotirindranath Tagore, 1924. Published by Sri Khitindranath Thakur, Adi Bramha Samaj, 55 Upper Chitpur Road, Kolkata. Printed by Sri Ranagopal Chakraborty, Adi Bramha Samaj Press, 55 Upper Chitpur Road, Kolkata. 2013 Tenth Reprint, Edited by Dr. Dhyanesh Narayan Chakrabarti, Published by Progressive Book Forum, 33, College Row, Kolkata-700009.

"Sri Bhagavadgita-Rahasya or Karma-Yoga-Sastra" by Sri Bal Gangadhar Tilak, English Translation by Sri Bhalchandra Sitaram Sukthankar, 1935. Volume 1 & 2; Published by R.B. Tilak, Lokamanya Tilak Mandir, 568, Narayan Peth, Poona City, India. Printed by S. V. Parulekar at the Bombay Vaibhav Press, Servants of India Society's Building, Sandhurst Road, Bombay, India.

Image Sources :
1) Russian comparison
2) Javanese art

Disclaimer:
This is a personal, non-commercial, research-oriented effort of a novice religious wanderer.
এটি আধ্যাত্মিক পথের এক অর্বাচীন পথিকের ব্যক্তিগত, অবাণিজ্যিক, গবেষণা-ধর্মী প্রয়াস মাত্র ।

[Digitised by scanning, then by running Google OCR and lastly by editing/typing mostly in MS-Word/Notepad using Unicode Bengali "Siyam Rupali" font and Avro Phonetic Keyboard for transliteration. Uploaded by rk]

<Next>

No comments:

Post a Comment