Sunday, June 4, 2017

গীতা ও ব্রহ্মসূত্র (Gita & Brahmasutras)

গীতা ও ব্রহ্মসূত্র


সূচি


1) গীতায় ব্রহ্মসূত্রের উল্লেখ
2) ব্রহ্মসূত্রে গীতার পরোক্ষ উল্লেখ
3) গীতা ও ব্রহ্মসূত্রের মধ্যে কালনির্ণয়ে বিরোধ
4) বিরোধের মীমাংসা
5) মহাভারতে ব্রহ্মসূত্রের উল্লেখ
6) চতুর্ব্যূহ ভাগবতধর্মের প্রভাব


1) গীতায় ব্রহ্মসূত্রের উল্লেখ


জ্ঞানপ্রধান, ভক্তিপ্রধান ও যোগ প্রধান উপনিষদসমূহের সঙ্গে ভগবদ্গীতায় যে সাদৃশ্য ও ভেদ আছে, তাহার এইরূপ বিচার করিবার পর প্রকৃত পক্ষে ব্ৰহ্মসূত্র ও গীতার তুলনা করিবার আবশ্যকতা নাই । কারণ, বিভিন্ন বিভিন্ন উপনিষদে বিভিন্ন ঋষি কর্তৃক বিবৃত অধ্যাত্মসিদ্ধান্তসমূহের পদ্ধতিবদ্ধ বিচারআলোচনা করিবার জন্যই বাদরায়ণাচার্যের ব্ৰহ্মসূত্র রচিত হয়, তাই উহাতে উপনিষদ হইতে ভিন্ন কোন বিচার আসিতে পারে না । কিন্তু ভগবদ্গীতার ত্ৰয়োদশ অধ্যায়ে ক্ষেত্র ও ক্ষেত্ৰজ্ঞের বিচার করিবার সময় ব্ৰহ্মসূত্রের স্পষ্ট উল্লেখ এই প্রকারে করা হইয়াছে, -
ঋষিভিৰ্বহুধা গীতং ছন্দোতির্বিবিধঃ পৃথক্‌ ৷
ব্ৰহ্মসূত্ৰপদৈশ্চৈব হেতুমদ্ভির্বিনিশ্চিতৈঃ ॥
অর্থাৎ ক্ষেত্ৰক্ষেত্রজ্ঞের “অনেক প্রকারে বিবিধ ছন্দে (অনেক) ঋষি পৃথক্‌ পৃথক্‌ এবং হেতুযুক্ত ও পূর্ণনিশ্চয়াত্মক ব্ৰহ্মসূত্রপদের দ্বারাও বিচার করিয়াছেন ।” [গী|১৩|৪]; এবং যদি এই ব্ৰহ্মসূত্র ও বর্তমান বেদান্তসূত্ৰ এক বলিয়াই মনে করিতে হয় তবে বলিতে হয় যে, বর্তমান বেদান্তসূত্রের পর বর্তমান গীতা রচিত হইয়া থাকিবে । তাই গীতার কালনির্ণয় করিবার দৃষ্টিতে ব্ৰহ্মসূত্র কোন্‌টি, তাহার বিচার করা নিতান্তই আবশ্যক । (এই বিষয়ের বিচার ৺তৈলঙ্গ করিয়াছেন; তাছারা ১৮৯৫ সনে এই বিষয়ের উপর অধ্যাপক তুকারাম রামচন্দ্র অমল নেরকর বি-এ’ও এক নিবন্ধ প্রকাশ করিয়াছেন ।) কারণ, বর্তমান বেদান্তসূত্র ব্যতীত ব্ৰহ্মসূত্র নামক দ্বিতীয় কোন গ্রন্থ এক্ষণে পাওয়া যায় না এবং তাহার বিষয় কোথাও কথিতও হয় নাই । এবং ইহা বলা তো কোন প্রকারে উচিত মনে করি না যে, বর্তমান ব্ৰহ্মসূত্রের পর গীতা রচিত হইয়া থাকিবে, কারণ, গীতার প্রাচীনতা সম্বন্ধীয় পরম্পরাগত ধারণা চলিয়া আসিতেছে । ইহা প্ৰতীত হয় যে, প্ৰায় এই বাধার প্ৰতি লক্ষ্য করিয়াই শাঙ্করভাষ্যে “ব্রহ্মসূত্ৰপদৈঃ”র অর্থ “শ্রুতির কিংবা উপনিষদের ব্ৰহ্মপ্ৰতিপাদক বাক্য” করা হইয়াছে । কিন্তু ইহার বিপরীতে শাঙ্করভাষ্যের টীকাকার আনন্দগিরি এবং রামানুজাচাৰ্য, মধ্বাচাৰ্য প্রভৃতি গীতার অন্যান্য ভাষ্যকার বলেন যে, এস্থলে “ব্ৰহ্মসূত্ৰপদৈশ্চৈব” শব্দে “অথাতো ব্ৰহ্মজিজ্ঞাসা” বাদরায়ণাচার্যের এই ব্ৰহ্মসূত্রেরই নির্দেশ করা হইয়াছে; এবং শ্ৰীধর স্বামীর উভয় অর্থ অভিপ্ৰেত । অতএব এই শ্লোকের প্রকৃত অৰ্থ কি, তাহা আমাকে স্বতন্ত্র রীতিতেই স্থির করিতে হইবে । ক্ষেত্র ও ক্ষেত্ৰজ্ঞবিচার সম্বন্ধে “ঋষিরা অনেক প্রকারে পৃথক” বলিয়াছেন; এবং তাহা ব্যতীত (চৈব) “হেতুযুক্ত ও বিনিশ্চয়াত্মক ব্ৰহ্মসূত্রপদের দ্বারাও” ঐ অর্থই কথিত হইয়াছে; এই প্রকারে এই শ্লোকে ক্ষেত্ৰ-ক্ষেত্রজ্ঞবিচারের দুই ভিন্ন ভিন্ন স্থলের উল্লেখ করা হইয়াছে, তাহা “চৈব” (আরও) এই পদ হইতে স্পষ্ট বুঝা যায় । এই দুই স্থল শুধু ভিন্ন নহে, কিন্তু উহাদের মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ ঋষিগণ কর্তৃক কৃত বর্ণনা “বিবিধ ছন্দে পৃথক্‌ পৃথক্‌ বিচ্ছিন্ন ও অনেক প্রকারের” এবং ‘ঋষিভিঃ’ (এই বহুবচন তৃতীয়ান্ত পদ) দ্বারা উহা যে অনেক ঋষিদিগের কৃত, তাহা স্পষ্ট জানা যাইতেছে । এবং ব্ৰহ্মসূত্রপদের অপর বর্ণনা “হেতুযুক্ত ও বিনিশ্চয়াত্মক” । এই প্রকারে এই দুই বৰ্ণনায় বিশেষ প্ৰভেদ এই শ্লোকেই স্পষ্ট করা হইয়াছে । ‘হেতুমৎ’ শব্দ মহাভারতের কয়েক স্থানে প্ৰযুক্ত হইয়াছে; তাহার অর্থ - “নৈয়ায়িক পদ্ধতি অনুসারে, কাৰ্যকারণভাব দেখাইয়া প্ৰতিপাদন করা” । উদাহরণ - জনকের নিকট সুলভা যে কথা বলিয়াছিলেন, কিংবা শ্রীকৃষ্ণ যখন মধ্যস্থতা করিতে কৌরবদিগের সভায় গিয়াছিলেন সেই সময়ে তিনি যে কথা বলিয়াছিলেন, তাহাই ধর । মহাভারতেই প্ৰথম কথাকে “হেতুমৎ ও অর্থবৎ” [শাং|৩২০|১৯১] এবং দ্বিতীয় কথাকে “সহেতুক” [উদ্যো|১৩১|২] বলা হইয়াছে । ইহা হইতে প্ৰকাশ পাইতেছে যে, যে প্ৰতিপাদনে সাধক-বাধক প্ৰমাণ দেখাইয়া শেষে কোন একটি অনুমান নিঃসন্দেহরূপে সিদ্ধ করা হয় তাহার সম্বন্ধেই “হেতুমদ্ভির্বিনিশ্চিতৈঃ” বিশেষণ প্রয়োগ করা যাইতে পারে; একস্থানে এক রকম অন্যস্থানে অন্য রকম, উপনিষদের এরূপ কোন সংকীর্ণ প্ৰতিপাদনসম্বন্ধে এই শব্দের প্রয়োগ হইতে পারে না । তাই, “ঋষিভিঃ বহুধা বিবিধৈঃ পৃথক্‌” এবং “হেতুমদ্‌ভিঃ বিনিশ্চিতৈঃ” এই পদগুলির বিরোধাত্মক স্বারস্য যদি বজায় রাখিতে হয়, তবে ইহাই বলিতে হয় যে, গীতার উক্ত শ্লোকে “ঋষিগণ কর্তৃক বিবিধ ছন্দে কৃত অনেক প্রকারের পৃথক্‌” বিচার হইতে বিভিন্ন উপনিষদের সংকীর্ণ ও পৃথক্‌ বাক্যই অভিপ্ৰেত, এবং “হেতুযুক্ত ও বিনিশ্চয়াত্মক ব্ৰহ্মসূত্ৰপদ” এই পদগুলি হইতে সাধকবাধক প্ৰমাণ দেখাইয়া শেষ সিদ্ধান্ত যাহাতে নিঃসন্দেহরূপে নিৰ্ণয় করা হইয়াছে, ব্ৰহ্মসূত্রে গ্রন্থের সেই বিচার অভিপ্ৰেত । আর একটা কথার প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত যে, উপনিষদের সমস্ত বিচার এদিকে ওদিকে বিক্ষিপ্ত হইয়া আছে, অর্থাৎ অনেক ঋষিদের যেমন যেমন মনে আসিয়াছিল তেমনি-তেমনিই উক্ত হইয়াছিল, তাহার ভিতর কোন বিশেষ পদ্ধতি বা ক্ৰম নাই; অতএব সেই বিচারসমূহের সমন্বয় না করিলে উপনিষদের ভাবাৰ্থ ঠিক অবগত হওয়া যায় না । তাই উপনিষদের সঙ্গে সঙ্গেই যে গ্রন্থে কাৰ্যকারণহেতু দেখাইয়া উহাদের (অর্থাৎ উপনিষদসমূহের) সমন্বয় করা হইয়াছে সেই গ্ৰন্থ বা বেদান্তসূত্রেরও (ব্ৰহ্মসূত্রের) উল্লেখ করা আবশ্যক ছিল ।


2) ব্রহ্মসূত্রে গীতার পরোক্ষ উল্লেখ


গীতার শ্লোকের এইরূপ অৰ্থ করিলে স্পষ্ট দেখা যায় যে, উপনিষদ্‌ ও ব্ৰহ্মসূত্র গীতার পূর্বে রচিত । তন্মধ্যে মুখ্য মুখ্য উপনিষৎ সম্বন্ধে কোন বিবাদই নাই; কারণ, এই উপনিষদ্‌সমূহের অনেক শ্লোক গীতায় শব্দশ পাওয়া যায় । কিন্তু ব্ৰহ্মসূত্ৰসম্বন্ধে সন্দেহ করিবার স্থান আছে; কারণ, ব্ৰহ্মসূত্রসমূহে ‘ভগবদ্গীতা’ শব্দটি সাক্ষাৎভাবে না আসিলেও, ভাষ্যকার মনে করেন যে, অন্ততঃ কতকগুলি সূত্রে ‘স্মৃতি’ শব্দের দ্বারা ভগবদ্গীতারই নির্দেশ করা হইয়াছে । যে ব্ৰহ্মসূত্রগুলিতে শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ‘স্মৃতি’ শব্দের দ্বারা গীতারই উল্লেখ করা হইয়াছে, তন্মধ্যে নিম্নপ্রদত্ত সূত্রগুলিই মুখ্য :-


ব্ৰহ্মসূত্ৰ-অধ্যায়, পাদ ও সূত্ৰ গীতা-অধ্যায় ও শ্লোক
1|2|6, স্মৃতেশ্চ । 18|61
1|3|23 অপি চ স্মর্য্যতে । 15|6
2|1|36 উপপদ্যতে চাপ্যুপলভ্যতে চ । 15|3
2|3|45 অপি চ স্মর্য্যতে 15|7
3|2|17 দর্শয়তি চাথো অপি স্মর্য্যতে 13|12
3|3|31 অনিয়মঃ সৰ্বসামবিরোধঃ শব্দানুমানাভ্যাম । 8|26
4|1|10 স্মরন্তি চ । 6|11
4|2|21 যোগিনঃ প্ৰতি চ স্মর্য্যতে । 8|23

উপরি-প্রদত্ত আট স্থলের মধ্যে কোন কোন স্থল সন্দিগ্ধ বলিয়া মনে করিলেও আমার মতে, চতুর্থ [ব্ৰসূ|২|৩|৪৫] ও অষ্টম [ব্ৰসূ|৪|২|২১] এই দুই স্থলে কোন সন্দেহ নাই; এবং ইহাও মনে রাখা আবশ্যক যে, এই বিষয়ে শঙ্করাচাৰ্য, রামানুজাচাৰ্য, মধ্বাচাৰ্য ও বল্লভাচাৰ্য এই চারি ভাষ্যকারদেগের মত একই প্রকার । ব্রহ্মসূত্রের উক্ত দুই স্থলের [ব্ৰসূ|২|৩|৪৫ এবং ৪|২|২১] সম্বন্ধে এই প্রসঙ্গের উপরেও দৃষ্টি দেওয়া অবশ্য কর্তব্য - জীবাত্মা ও পরমাত্মার পরস্পর সম্বন্ধ কি, তাহার বিচার করিবার সময় প্রথমে জগতের অন্য পদার্থের ন্যায় জীবাত্মা পরমাত্মা হইতে উৎপন্ন হ্য় নাই, ইহা “নাত্মাহশ্ৰুতের্নিত্যত্বাচ্চ তাভ্যঃ” [ব্ৰসূ|২|৩|১৭] এই সূত্রের, দ্বারা নির্ণয় করা হইয়াছে; পরে “অংশো নানাব্যপদেশাৎ” [২|৩|৪৩] এই সূত্রে জীবাত্মা পরমাত্মারই অংশ, ইহা বলা হইয়াছে, এবং পরে “মন্ত্রবর্ণাচ্চ” [২|৩|৪৪] এইরূপ শ্রুতির প্রমাণ দিয়া শেষে “অপিচ স্মর্য্যতে” [২|৩|৪৫] “স্মৃতিতেও ইহাই উক্ত হইয়াছে”, এই সূত্রের প্রয়োগ করা হইয়াছে । সকল ভাষ্যকারেরাই বলিয়াছেন যে, ইহা স্মৃতি অর্থাৎ গীতার “মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ” [গী|১৫|৭] এই বচন । কিন্তু ইহা অপেক্ষা শেষের স্থলটি [ব্ৰসূ|৪|২|২১] আরও অধিক নিঃসন্দেহ । দেবযান ও পিতৃযান এই দুই গতিতে ক্রমানুসারে উত্তরায়ণের ছয়মাস এবং দক্ষিণায়নের ছয়মাস হয়, এবং উহাদের অর্থ কালমূলক না করিয়া বাদরায়ণাচাৰ্য বলেন যে, ঐ শব্দগুলি হইতে তৎতৎকালাভিমানী দেবতা অভিপ্ৰেত [বেসূ|৪|৩|৪], ইহা পুর্বেই দশম প্রকরণে আমি বলিয়াছি । এক্ষণে এই প্রশ্ন উঠিতে পারে যে, দক্ষিণায়ন ও উত্তরায়ণ শব্দদ্বয়ের কালবাচক অর্থ কি কখনই গ্ৰহণ করা যায় না ? এই জন্য “যোগিনঃ প্ৰতি চ স্মর্য্যতে” [ব্ৰসূ|৪|২|২১] অর্থাৎ এই কাল “স্মৃতিতে যোগীদিগের পক্ষে বিহিত বলিয়া স্বীকৃত হইয়াছে” - এই সূত্রের প্রয়োগ করা হইয়াছে; এবং “যত্র কালে ত্বনাবৃত্তিমাবৃত্তিং চৈব যোগিনঃ”[গী|৮|২৩] এই গীতা বচনে, এই কাল যোগীদিগের পক্ষে বিহিত, এইরূপ স্পষ্ট বলা হইয়াছে । ইহা হইতে ভাষ্যকারদিগের কথা অনুসারে অগত্যা বলিতে হয় যে, উক্ত দুই স্থলে ব্ৰহ্মসূত্রের ‘স্মৃতি’ শব্দের দ্বারা ভগবদ্গীতাই বিবক্ষিত হইয়াছে ।


3) গীতা ও ব্রহ্মসূত্রের মধ্যে কালনির্ণয়ে বিরোধ


কিন্তু ভগবদ্গীতায় ব্ৰহ্মসূত্রের স্পষ্ট উল্লেখ আছে এবং ব্ৰহ্মসূত্রে ‘স্মৃতি’ শব্দের দ্বারা ভগবদ্গীতারই নিৰ্দেশ করা হইয়াছে স্বীকার করিলে, উভয়ের মধ্যে কালদৃষ্টিতে বিরোধ উৎপন্ন হয় । তাহা এই; ভগবদ্গীতায় ব্ৰহ্মসূত্রের স্পষ্ট স্পষ্ট উল্লেখ থাকায়, ব্ৰহ্মসূত্র গীতার পূর্বে রচিত বলিয়া মনে হয়, এবং ব্ৰহ্মসুত্ৰে “স্মৃতি” শব্দের দ্বারা গীতাই বিবক্ষিত হইয়াছে মনে করিলে, গীতাকে ব্ৰহ্মসূত্রের পূর্ববর্তী বলিয়া ধরিতে হয় । একবার ব্ৰহ্মসূত্র গীতার পূর্ববর্তী, আর একবার উহা গীতার পরবর্তী হওয়া সম্ভব নহে । ভাল; এখন এই মুস্কিল এড়াইবার জন্য, “ব্রহ্মসূত্ৰপদৈঃ” শব্দে শাঙ্করভাষ্যে প্রদত্ত অর্থ স্বীকার করিলে, “হেতুমদ্‌ভির্বিনিশ্চিতৈঃ” ইত্যাদি পদের স্বারস্যই (সার্থকতা) থাকে না; এবং ব্ৰহ্মসূত্রের “স্মৃতি” শব্দের দ্বারা গীতা ব্যতীত অন্য কোন স্মৃতিগ্ৰন্থ বিবক্ষিত হইয়া থাকিবে মনে করিলে, সমস্ত ভাষ্যকারই ভুল করিয়াছেন বলিতে হয় ।  ভাল; তাঁহারা ভুল করিয়াছেন বলিলেও ‘স্মৃতি’ শব্দের দ্বারা কোন গ্ৰন্থ বিবক্ষিত তাহা কিছুতেই বলিতে পারা যায় না । তখন এই মুস্কিল কাটাইবে কি করিয়া ?


4) বিরোধের মীমাংসা


আমার মতে এই মুস্কিল হইতে উদ্ধার, পাইবার একটিমাত্র পথ আছে । ব্ৰহ্মসূত্র যিনি রচিয়াছিলেন তিনিই মূল ভারতের এবং গীতার বর্তমান রূপটি প্ৰদান করিয়া থাকিবেন । এইরূপ মনে করিলে, কোন গোলযোগই থাকে না । ব্ৰহ্মসূত্ৰকে “ব্যাস সূত্র” বলিবার প্রচলিত রীতি আছে; এবং “শেষত্বাৎ পুরুষাৰ্থবাদো যথান্বেম্বিতি জৈমিনিঃ’ [বেসু|৩|৪|২] এই সূত্রের উপর শাঙ্করভাষ্যের টীকায়, আনন্দগিরি লিখিয়াছেন যে, জৈমিনি বেদান্তসূত্ৰকার ব্যাসের শিষ্য ছিলেন; এবং আরম্ভের মঙ্গলাচরণেও, “শ্ৰীমদ্‌ব্যাসপয়োনিধির্নিধিরসৌ” এইরূপ তিনি ব্ৰহ্মসূত্রের বর্ণনা করিয়াছেন । মহাভারতের ভিত্তিতে আমি উপরে বলিয়া আসিয়াছি যে, মহাভারতকার ব্যাসের পৈল, শুক, সুমন্তু, জৈমিনি বৈশম্পায়ন এই পাচ শিষ্য ছিলেন; এবং ব্যাস তাঁহাদিগকে মহাভারত পড়াইয়াছিলেন । এই দুই কথা একত্ৰ করিয়া বিচার করিলে ইহাই অনুমিত হয় যে, মূল ভারত এবং তদন্তৰ্গত গীতার বর্তমান রূপ প্রদান করা এবং ব্রহ্মসূত্র রচনা, এই দুই কাজই এক বাদরায়ণ ব্যাসই করিয়া থাকিবেন । এই কথার ইহা অর্থ নহে যে, বাদরায়ণাচাৰ্য বর্তমান মহাভারত নূতন রচিয়াছিলেন, আমার উক্তির ভাবাৰ্থ এই যে, মতাভারত গ্ৰন্থ অতি বিস্তীর্ণ হওয়ায় সম্ভবত বাদরায়ণাচার্যের সময়ে তাহার কোন কোন অংশ এদিক ওদিক বিক্ষিপ্ত কিংবা লুপ্তও হইয়া থাকিবে । এই অবস্থায় তৎকালে প্ৰাপ্ত মহাভারতের অংশসমূহের অনুসন্ধান করিয়া এবং যেখানে যেখানে গ্ৰন্থ অসম্পূর্ণ, অশুদ্ধ ও দোষযুক্ত হইয়া পড়িয়াছে দেখা গিয়াছিল সেই সেই স্থানে তাহার শুদ্ধি ও পূৰ্ত্তি করিয়া এবং অনুক্ৰমণিকা প্রভৃতি জুড়িয়া দিয়া বাদারাণাচাৰ্য এই গ্রন্থের পুনরুজ্জীবন করিয়া থাকিবেন কিংবা তাহার বর্তমান রূপ দিয়া থাকিবেন । মারাঠী সাহিত্যে জ্ঞানেশ্বরী গ্রন্থের এইরূপ শুদ্ধিই একনাথ মহারাজ করিয়াছিলেন বলিয়া প্ৰসিদ্ধ আছে; এবং একথাও প্রচলিত আছে যে, সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণমহাভাষ্য একবার প্রায় লুপ্ত হইয়া গিয়াছিল এবং চন্দ্ৰশেখরাচাৰ্যকে তাহার পুনরুদ্ধার করিতে হইয়াছিল । মহাভারতের অন্য প্ৰকরণে গীতার শ্লোক কেন পাওয়া যায় তাহার উপপত্তি এক্ষণে ঠিক পাওয়া যাইতেছে; এবং গীতায় ব্ৰহ্মসূত্রের স্পষ্ট উল্লেখ এবং ব্ৰহ্মসূত্রে ‘স্মৃতি’ শব্দের দ্বারা গীতার নির্দেশ কেন করা হইল তাহারও মীমাংসা সহজ হইতেছে । গীতার যে ভিত্তিতে বর্তমান গীতা রচিত হইয়াছে তাহা বাদরায়ণাচার্যের পূর্বেও উপলব্ধ ছিল, তাই ব্ৰহ্মসূত্রে “স্মৃতি’ শব্দে তাহার নির্দেশ করা হইয়াছে; এবং মহাভারতের সংশোধন করিবার সময় গীতায় উক্ত হইয়াছে যে, ক্ষেত্ৰক্ষেত্রজ্ঞের সবিস্তুার বিচার ব্ৰহ্মসূত্রে করা হইয়াছে । 
(ব্রহ্মসূত্র বেদান্তসম্বন্ধীয় মুখ্যগ্রন্থ এবং সেইরূপ গীতা কর্মযোগ সম্বন্ধে প্রধান – ইহা আমি পুর্ব প্রকরণে দেখাইয়াছি । এখন ব্ৰহ্মসূত্র ও গীতা একই বাক্তি অর্থাৎ ব্যাস রচনা করিয়াছিলেন আমার এই অনুমান সত্য হইলে, এই দুই শাস্ত্রের কর্তা ব্যাসকেই মানিতে হয় । আমি এই কথা অনুমানের দ্বারা উপরে সিদ্ধ করিয়াছি । কিন্তু কুম্ভকোণস্থ কৃষ্ণাচার্য, দাক্ষিণাত্য পাঠানুসারে মহাভারতের যে এক সংস্করণ অধুনা ছাপাইয়াছেন তাহাতে শান্তিপর্বের ২১২ অধ্যায়ে (বার্ষ্ণেয়াধ্যাত্ম প্রকরণে) যুগারম্ভে বিভিন্ন শাস্ত্র ও ইতিহাস কিরূপে উৎপন্ন হইল তাহার বর্ণনা করিবার সময় নিম্নলিখিত ৩৪’তম শ্লোকটি দিয়াছেন :-
বেদান্তকর্মযোগং চ বেদবিদ্‌ ব্রহ্মবিদ্‌ বিভুঃ ৷
দ্বৈপায়নো নিজগ্রাহ শিল্পশাস্ত্রং ভৃগুঃ পুনঃ ॥
ইহাতে ‘বেদান্তকর্মযোগ’ একবচনান্ত উল্লেখ পদ আছে, কিন্তু তাহার অর্থ ‘বেদান্ত ও কর্মযোগই’ করিতে হয় । অথবা এইরূপও মনে হয় যে, ‘বেদান্তং কর্মযোগং চ’ ইহাই মূল পাঠ হইবে এবং লিখিবার সময় কিংবা ছাপিবার সময় ‘ন্তং-’এর অনুস্বরটি বাদ পড়িয়া গিয়া থাকিবে । বেদান্ত ও কর্মযোগ এই দুই শাস্ত্ৰ ব্যাস প্রাপ্ত হইয়াছিলেন এবং ভৃগু শিল্পশাস্ত্র পাইয়াছিলেন, এইরূপ এই শ্লোকে স্পষ্ট উক্ত হইয়াছে । কিন্তু এই শ্লোক বোম্বাই নগরের গণপৎ কৃষ্ণাজীর ছাপাখানায় মুদ্রিত সংস্করণে এবং কলিকাতার সংস্করণেও পাওয়া যায় না । কুম্ভকোণ-সংস্করণে শান্তিপর্বের ২১২’তম অধ্যায় বোম্বাই ও কলিকাতার সংস্করণে ২১০’তম অধ্যায় হইয়াছে । কুম্ভকোণ-পাঠের এই শ্লোক আমার মিত্র ডাঃ গণেশ-কৃষ্ণ গর্দে আমার নজরে আনায় আমি তাঁহাকে ধন্যবাদ করিতেছি । তাঁহার মতে, এই স্থানে কর্মযোগ শব্দে গীতাই বিবক্ষিত; এবং গীতা ও বেদান্তসূত্র এই দুইয়েরই কর্তৃত্ব এই শ্লোকে ব্যাসকেই প্রদত্ত হইয়াছে । মহাভারতের তিন সংস্করণের মধ্যে কেবল এক সংস্করণেই এই পাঠ পাওয়া যায় বলিয়া এই সম্বন্ধে একটু সন্দেহ উপস্থিত হয় । কিন্তু যাই বল না কেন, উহা হইতে এটুকু তো সিদ্ধ হয় যে, বেদান্ত ও কর্মযোগের কর্তা যে একই, আমাদের এই অনুমান কিছুই নূতন কিংবা ভিত্তিহীন নহে ।)


5) মহাভারতে ব্রহ্মসূত্রের উল্লেখ


বর্তমান গীতায় ব্রহ্মসূত্রের এই যে উল্লেখ আছে তাহারই অনুরূপ সূত্রগ্রন্থের অন্য উল্লেখ বর্তমান মহাভারতেও আছে । উদাহরণ যথা - অনুশাসনপর্বের অষ্টাবক্ৰাদিসংবাদে “অনৃতাঃ স্ত্রিয় ইত্যেবং সূত্রকারো ব্যবস্যতি” [অনু|১৯|৬] এই বাক্য আছে । সেইরূপ আবার, শতপথ ব্ৰাহ্মণ [শান্তি|৩১৮|১৬-২৩], পঞ্চরাত্র [শান্তি|৩৩৯|১০৭], মনু [অনু|৩৭|১৬] এবং যাস্কের নিরুক্ত [শান্তি|৩৪২|৭১], ইহাদেরও অন্যত্র স্পষ্ট উল্লেখ করা হইয়াছে । কিন্তু গীতার ন্যায় মহাভারতের সকল অংশ মুখস্থ করিবার রীতি ছিল না, তাই গীতার অতিরিক্ত মহাভারতে অন্য স্থানে অন্য গ্রন্থের যে উল্লেখ আছে, তাহা কালনির্ণয়ার্ত কতটা বিশ্বসনীয় সে বিষয়ে সহজেই সংশয় উপস্থিত হয় । কারণ, যে অংশ কণ্ঠস্থ করা হয় না, তাহাতে কোন শ্লোক প্ৰক্ষিপ্ত করা কিছু কঠিন নহে । কিন্তু আমাদের মতে বর্তমান গীতায় প্রদত্ত ব্ৰহ্মসূত্রের উল্লেখ একমাত্র বা অপূর্ব সুতরাং অবিশ্বাস্য নহে ইহা দেখাইবার জন্য উপরি-উক্ত অন্য উল্লেখের উপযোগ করা কিছু অনুচিত হইবে না । “ব্ৰহ্মসূত্ৰপদৈশ্চৈব” ইত্যাদি শ্লোকান্তর্ভূত পদসমূহের অর্থস্বারস্যের মীমাংসা করিয়া আমি উপরে নির্ণয় করিয়াছি যে, ভগবদ্গীতায় বর্তমান ব্ৰহ্মসূত্রের কিংবা বেদান্তসূত্রেরই উল্লেখ করা হইয়াছে । 


6) চতুর্ব্যূহ ভাগবতধর্মের প্রভাব


কিন্তু ভগবদ্গীতায় ব্ৰহ্মসূত্রের উল্লেখ আসিবার - এবং তাহাও ত্রয়োদশ অধ্যায়ে অর্থাৎ ক্ষেত্ৰক্ষেত্রজ্ঞবিচারেই আসিবার - আমার মতে এক মহত্বপূর্ণ ও দৃঢ় কারণ আছে । ভগবদ্গীতায় বাসুদেব-ভক্তিতত্ত্ব মূল ভাগবত বা পাঞ্চরাত্ৰ-ধর্ম হইতে গৃহীত হইলেও (আমি পূর্ব প্রকরণসমূহে যেমন বলিয়া আসিয়াছি) চতুর্ব্যূহপাঞ্চরাত্র ধর্মের মূল জীব ও মনের উৎপত্তি সম্বন্ধে এই মত ভগবদ্গীতার মান্য নহে যে, বাসুদেব হইতে সংকর্ষণ অর্থাৎ জীব, সংকর্ষণ হইতে প্রদ্যুম্ন (মন) এবং প্রদ্যুম্ন হইতে অনিরূদ্ধ (অহঙ্কার) উৎপন্ন হইয়াছে । জীবাত্মা অন্য কিছু হইতে উৎপন্ন হয় নাই [বেসূ|২|৩|১৭], উহা সনাতন পরমাত্মারই নিত্য ‘অংশ’ [বেসূ|২|৩|৪৩], ইহাই ব্ৰহ্মসূত্রের সিদ্ধান্ত । সেইজন্য, ব্ৰহ্মসূত্রের দ্বিতীয় অধ্যায়ের দ্বিতীয় পাদে প্ৰথমে বলা হইয়াছে যে, বাসুদেব হইতে সংকর্ষণ হওয়া অর্থাৎ ভাগবতধর্মীয় জীবের উৎপত্তি সম্ভব নহে [বেসূ|২|২|৪২], এবং পুনরায় বলা হইয়াছে যে, মন জীবের এক ইন্দ্ৰিয় হওয়া প্ৰযুক্ত জীব হইতে প্ৰদ্যুম্নের (মন) উৎপত্তি হওয়াও সম্ভব নহে [বেসূ|২|২|৪৩]; কারণ লোকব্যবহারের দিকে দেখিলে তো ইহাই মনে হয় যে, কর্তা হইতে কারণ বা সাধন উৎপন্ন হয় না । এই প্রকার বাদরায়ণাচাৰ্য ভাগবত-ধর্মে বর্ণিত জীবোৎপত্তি যুক্তিপূর্বক খণ্ডন করিয়াছেন । সম্ভবত এই সম্বন্ধে ভাগবতধর্মী এই উত্তর দিবেন যে, আমি বাসুদেব (ঈশ্বর), সংকর্ষণ (জীব), প্রদ্যুম্ন (মন) ও অনিরূদ্ধ (অহঙ্কার) এই চারি জনকেই সমান জ্ঞানী মনে করি এবং এক হইতে অপরের উৎপত্তিকে লাক্ষণিক ও গৌণ বিবেচনা করি । কিন্তু এইরূপ মনে করিলে, এক মুখ্য পরমেশ্বরের স্থানে চারি মুখ্য পরমেশ্বর হইয়া দাঁড়ায় । তাই এই উত্তরও উপযোগী নহে এইরূপ ব্ৰহ্মসূত্রে উক্ত হইয়াছে; এবং পরমেশ্বর হইতে জীব উৎপন্ন হয় এই মত বেদের অর্থাৎ উপনিষদের বিরুদ্ধ অতএব ত্যাজ্য, বাদরায়ণাচাৰ্য এই শেষ সিদ্ধান্ত করিয়াছেন [বেসূ|২|২|৪৪, ৪৫]

ভাগবতধর্মের কর্মমূলক ভক্তিতত্ত্ব ভগবদ্গীতায় গৃহীত হইয়াছে সত্য বটে; তথাপি গীতার ইহাও সিদ্ধান্ত যে, জীব বাসুদেব হইতে উৎপন্ন হয় নাই, কিন্তু উহা নিত্য পরমাত্মারই ‘অংশ’ [গী|১৫|৭] । জীবসম্বন্ধীয় এই সিদ্ধান্ত মূল ভাগবতধর্ম হইতে গৃহীত হয় নাই, এই জন্য ইহার আধার কি তাহা বলা আবশ্যক ছিল; কারণ এরূপ না করিলে, এই ভুল ধারণা হইতে পারিত যে, চতুর্ব্যূহ ভাগবতধর্মের প্রবৃত্তিমূলক ভক্তিতত্ত্বের সঙ্গে সঙ্গেই জীবের উৎপত্তিসংক্রান্ত কল্পনাও গীতার অভিমত । অতএব ক্ষেত্ৰক্ষেত্ৰজ্ঞবিচারে যখন জীবাত্মার স্বরূপ বলিবার প্রসঙ্গ উপস্থিত হইল তখন অর্থাৎ গীতার ত্রয়োদশ অধ্যায়ের আরম্ভেই ইহা স্পষ্ট বলিতে হইল যে, “ক্ষেত্ৰজ্ঞের অর্থাৎ জীবের স্বরূপসম্বন্ধে আমাদের মত ভাগবতধর্মের অনুরূপ নহে, বরঞ্চ উপনিষদের ঋষিদিগের মতানুযায়ী ।” অধিকন্তু উহার সঙ্গে সঙ্গেই স্বভাবত ইহাও বলিতে হইল যে, ভিন্ন ভিন্ন ঋষিরা ভিন্ন ভিন্ন উপনিষদে পৃথক্‌ পৃথক্‌ উপপাদন করায়, সেই সমস্তের ব্ৰহ্মসূত্রে কৃত সমত্বরই [বেসূ|২|৩|৪৩] আমার গ্ৰাহ্য । এই দৃষ্টিতে বিচার করিলে উপলব্ধি হইবে যে, ভাগবতধর্মসম্বন্ধে ব্ৰহ্মসূত্রে যে আপত্তি করা হইয়াছে, তাহা যাহাতে দূর হয় সেই ভাবে ভাগবতধর্মের ভক্তিমাৰ্গকে গীতার মধ্যে সমাবেশ করা হইয়াছে । রামানুজাচাৰ্য স্বকীয় বেদান্তসূত্ৰভাষ্যে উক্ত সূত্রের অর্থ বদলাইয়া ফেলিয়াছেন [বেসূ|রাভা|২|২|৪২-৪৬ দেখ] । কিন্তু আমাদের মতে, এই অর্থ ক্লিষ্ট অতএব অগ্রাহ্য । থিবো সাহেবের মনের ঝোঁক রামানুজভাষ্যে প্রদত্ত অর্থের দিকেই; কিন্তু থিবোর লেখা পড়িয়া তো ইহাই মনে হয় যে, তিনি এই মতবাদের ঠিক্‌ স্বরূপটি বুঝেন নাই । মহাভারতে শান্তিপর্বের শেষ অংশে নারায়ণীয় কিংবা ভাগবতধর্মের যে বৰ্ণনা আছে তাহাতে বাসুদেব হইতে জীব অর্থাৎ সংকর্ষণ উৎপন্ন হইয়াছে, এরূপ বৰ্ণনা নাই; কিন্তু “যিনি বাসুদেব তিনিই (স এব) সংকর্ষণ অর্থাৎ জীব বা ক্ষেত্ৰজ্ঞ” এইরূপ প্ৰথমে উক্ত হইয়াছে [শা|৩৩৪|২৮ ও ২৯; এবং ৩৩৯|৩৯ ও ৭১ দেখ]; এবং ইহার পরে সংকর্ষণ হইতে প্ৰদুম্ন পৰ্যন্ত কেবল পরম্পরা প্ৰদত্ত হইয়াছে । এক স্থানে তো স্পষ্টই কথিত হইয়াছে যে, ভাগবতধর্মকে কেহ চতুর্ব্যূহ, কেহ ত্ৰিব্যূহ, কেহ দ্বিব্যূহ এবং শেষে কেহ একব্যূহও মনে করেন [মভা|শা|৩৪৮|৫৭] । কিন্তু ভাগবতধর্মের এই নানা পক্ষ স্বীকার না করিয়া তন্মধ্যে ক্ষেত্ৰক্ষেত্ৰজ্ঞের পরস্পর সম্বন্ধ বিষয়ে উপনিষৎ ও ব্রহ্মসূত্রের যাহাতে মিল হইতে পারে এইরূপ একটি মতই গীতায় স্থির রাখা হইয়াছে । এবং এই বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিলে, এই প্রশ্নের ঠিক মীমাংসা হইবে যে, ব্ৰহ্মসূত্রের উল্লেখ গীতায় কেন করা হইয়াছে ? অথবা, ইহা বলা বাহুল্য যে, মূল গীতায় এই একটী সংস্কারই সাধিত হইয়াছে ।


___________________________
Reference:

"Shrimadbhagabadgita Rahasya" or "Karmajogsastra" by Lokmanya Bal Gangadhar Tilak, translated by Sri Jyotirindranath Tagore, 1924. Published by Sri Khitindranath Thakur, Adi Bramha Samaj, 55 Upper Chitpur Road, Kolkata. Printed by Sri Ranagopal Chakraborty, Adi Bramha Samaj Press, 55 Upper Chitpur Road, Kolkata. 2013 Tenth Reprint, Edited by Dr. Dhyanesh Narayan Chakrabarti, Published by Progressive Book Forum, 33, College Row, Kolkata-700009.

"Sri Bhagavadgita-Rahasya or Karma-Yoga-Sastra" by Sri Bal Gangadhar Tilak, English Translation by Sri Bhalchandra Sitaram Sukthankar, 1935. Volume 1 & 2; Published by R.B. Tilak, Lokamanya Tilak Mandir, 568, Narayan Peth, Poona City, India. Printed by S. V. Parulekar at the Bombay Vaibhav Press, Servants of India Society's Building, Sandhurst Road, Bombay, India.

Disclaimer:
This is a personal, non-commercial, research-oriented effort of a novice religious wanderer.
এটি আধ্যাত্মিক পথের এক অর্বাচীন পথিকের ব্যক্তিগত, অবাণিজ্যিক, গবেষণা-ধর্মী প্রয়াস মাত্র ।

[Digitised by running Google OCR on scanned copy obtained from publicly available digital library and then by editing/typing mostly in MS-Word/Notepad using Unicode Bengali "Siyam Rupali" font and Avro Phonetic Keyboard for transliteration. Contents and sub-headings added by up-loader. Uploaded by rk]

<Previous-Contents-Next>

No comments:

Post a Comment